সহজে ও কম খরচে শিক্ষা উপকরণ তৈরি করার উপায়। ।Easy and Low-Cost Ways to Create Educational Materials.
শিশুরা যখন শেখে, তারা কেবল চোখ দিয়ে পড়ে না—তারা দেখে, ধরে, অনুভব করে ও খেলে খেলে শেখে। তাই প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। তবে বাস্তবতা হলো, অনেক স্কুলেই নেই পর্যাপ্ত উপকরণ, আর অনেক শিক্ষক বা অভিভাবক মনে করেন এগুলো বানাতে অনেক খরচ লাগে।
কিন্তু সত্যি হলো—সহজে ও কম খরচে ঘরে থাকা পুরনো জিনিস দিয়েই বানানো যায় শিশুদের শেখার অসাধারণ উপকরণ। শুধু দরকার একটু চিন্তা, একটু সৃজনশীলতা আর শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা। এই ব্লগে আমরা জানবো কীভাবে বোতলের ঢাকনা, পিচবোর্ড, পুরনো কাগজ বা কাপড় দিয়েই বানানো যায় দারুণ সব শেখার সামগ্রী—যা শিশুদের আনন্দ দেবে, আর শিক্ষকদের পড়ানো হবে আরও প্রাণবন্ত।
🎯 সহজে শিক্ষা উপকরণ তৈরি করার গুরুত্ব
সহজ ও ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে তৈরি শিক্ষা উপকরণ শিশুদের শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশুদের শেখা তখনই অর্থবহ হয়, যখন তারা দেখার পাশাপাশি ধরতে পারে, অনুভব করতে পারে, এমনকি খেলতে খেলতেও শিখতে পারে। এই ধরনের উপকরণ শিশুর মধ্যে কৌতূহল জাগায়, যা তাদের শেখার গতি বাড়ায়।
এছাড়া, হাতে-কলমে বা বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখা শিশুদের মনে বিষয়বস্তু অনেক বেশি সময় ধরে গেঁথে থাকে। যেমন – বোতলের ঢাকনা দিয়ে যোগ-বিয়োগ শেখানো কিংবা রঙিন কাগজে অক্ষর কেটে শব্দ গঠন শেখানো—এসব বাস্তব উদাহরণ শিশুকে মজার ছলে জ্ঞানার্জনে সহায়তা করে।
সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষক যখন নিজেই শিক্ষা উপকরণ তৈরি করেন, তখন তার সৃজনশীলতাও বিকশিত হয়। নিজের তৈরি উপকরণে শিক্ষকের অনুপ্রেরণা ও যত্ন যুক্ত হয়, যা পাঠদানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং ক্লাসরুম হয় আরও প্রাণবন্ত ও শিক্ষাবান্ধব।
🧰 কম খরচে শিক্ষা উপকরণ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
সহজে এবং সাশ্রয়ী উপায়ে শিক্ষা উপকরণ তৈরি করতে হলে ঘরের আশপাশেই পাওয়া যায় এমন কিছু সাধারণ জিনিসই যথেষ্ট। যেমন—পুরনো খাতা, কাগজ বা পিচবোর্ড দিয়ে বানানো যায় ফ্ল্যাশকার্ড, শব্দপত্তন বোর্ড বা গাণিতিক চিত্র। বোতলের রঙিন ঢাকনা ব্যবহার করা যায় সংখ্যা শেখানো বা গেম তৈরির কাজে।
তেমনি, আইসক্রিম স্টিক দিয়ে বানানো যায় অক্ষর সাজানো, জোড়া মেলানো বা গণনার খেলনা। রঙিন কাগজ, আঠা ও পুরনো ম্যাগাজিন কেটে কোলাজ, শব্দ-চেনা বা চিত্র-ভিত্তিক উপকরণ তৈরি করা যায় খুব সহজেই। কাপড়ের টুকরো দিয়ে হাতপুতুল বা প্যাচওয়ার্ক শেখার উপকরণও বানানো সম্ভব।
এছাড়া, খালি সাবানের বা টুথপেস্টের বাক্স দিয়েও গঠনমূলক খেলাধুলা ও বিষয়ভিত্তিক উপকরণ তৈরি করা যায়। এই সব জিনিসই সহজলভ্য, পরিবেশবান্ধব এবং শিশুদের শেখার আনন্দ বাড়াতে দারুণ কার্যকর।
১. 🎴 ফ্ল্যাশকার্ড (Flashcards)
ফ্ল্যাশকার্ড হলো এক ধরনের ছোট ছোট কার্ড যেখানে এক পাশে ছবি, সংখ্যা, বর্ণ বা শব্দ লেখা থাকে। এটি শিশুদের মজার ছলে শেখাতে খুবই কার্যকর একটি উপকরণ।
✅ কী কাজে লাগে:
১. অক্ষর ও শব্দ চিনতে
২. সংখ্যা ও গণনা শেখাতে
৩. রঙ, আকৃতি, পশুপাখি, ফলমূল ইত্যাদি চেনাতে
৪. মিল খেলা বা প্রশ্ন-উত্তর খেলায়
🧰 প্রয়োজনীয় উপকরণ:
১. পুরনো ক্যালেন্ডার বা পিচবোর্ড
২. রঙিন কাগজ বা ম্যাগাজিনের ছবি
৩. কাঁচি, আঠা, মারকার পেন
৪. ল্যামিনেশন করার জন্য সেলোটেপ (ঐচ্ছিক)
🛠️ তৈরির পদ্ধতি:
১. পিচবোর্ড বা শক্ত কাগজ ছোট আকারে কেটে নিন (৮x১২ সেমি মত)।
২. এক পাশে বড় হরফে অক্ষর/সংখ্যা লিখুন অথবা ছবি আঁকুন/লগান।
3. অন্য পাশে শব্দ বা অর্থ দিন (চাইলে)।
4. টিকিয়ে রাখার জন্য পাতলা ফোল্ডার বা রাবার ব্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন।
🎉 বিশেষ টিপস:
১. বিষয়ভিত্তিক সেট তৈরি করুন (যেমন: ফল, পশু, সংখ্যা, বর্ণ)।
২. শিশুদের অংশগ্রহণে বানালে তারা আরও উৎসাহ পাবে।
৩. ব্যবহার শেষে বক্সে রাখুন, যাতে দীর্ঘদিন টিকে থাকে।
২. 🧮 সংখ্যা বোর্ড (Number Board)
সংখ্যা বোর্ড একটি কার্যকর শিক্ষা উপকরণ যা শিশুদের ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যা চেনা, লেখা ও গাণিতিক চিন্তা বিকাশে সাহায্য করে। এটি গণিতের মৌলিক ধাপগুলো মজার ছলে শেখাতে সহায়তা করে।
✅ কী কাজে লাগে:
১। ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যা চিনতে ও পড়তে
২। জোড় ও বিজোড় সংখ্যা আলাদা করতে
৩। সংখ্যা ক্রম ও উল্টোক্রম বুঝতে
৪। যোগ, বিয়োগ ও গুণের ধারণা গড়ে তুলতে
🧰 প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
১। বড় একটি পিচবোর্ড বা কার্ডবোর্ড
২। রঙিন কাগজ
৩। স্কেল ও মারকার কলম
৪। আঠা
৫। পুরনো বোতলের ঢাকনা (ঐচ্ছিক)
🛠️ তৈরির পদ্ধতি:
১। বড় একটি শক্ত পিচবোর্ড নিন।
২। স্কেলের সাহায্যে ১০টি সারি ও ১০টি কলাম করে ১০০টি ঘর তৈরি করুন।
৩। প্রতিটি ঘরে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যা বাংলায় লিখুন।
৪। ভিন্ন রঙ ব্যবহার করে প্রতি ১০টি সংখ্যা আলাদা করুন।
৫। বোতলের ঢাকনা দিয়ে শিশুদের দিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা চিহ্নিত করতে বলুন।
🎉 বিশেষ টিপস:
১। প্রতিটি সংখ্যার পাশে চিত্র দিন (যেমন: ৫ = ৫টি আপেল)।
২। সপ্তাহে একবার “গুণিতক চিহ্নিত করো” বা “জোড়-বিজোড় আলাদা করো” খেলানো যেতে পারে।
৩। বোর্ডটি দেয়ালে লাগিয়ে রাখলে ক্লাসে নিয়মিত ব্যবহার করা যায়।
৩. 🔠 অক্ষর চেনার চার্ট (Alphabet Chart)
অক্ষর চেনার চার্ট হলো একটি রঙিন ও আকর্ষণীয় চার্ট, যেখানে বাংলা বর্ণমালার অক্ষরগুলো ছবিসহ উপস্থাপন করা হয়। এটি শিশুদের সহজে অক্ষর শেখায় এবং পড়ার আগ্রহ বাড়ায়।
✅ কী কাজে লাগে:
১। স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ শেখাতে
২। অক্ষর চিনে শব্দ গঠন শেখাতে
৩। শব্দের সাথে ছবি মিলিয়ে বুঝতে
৪। মুখে উচ্চারণ অনুশীলনে সহায়তা করতে
🧰 প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
১। বড় একটি কার্ডবোর্ড বা পিচবোর্ড
২। রঙিন কাগজ বা পুরনো ম্যাগাজিন থেকে কাটা ছবি
৩। মারকার পেন, স্কেল
৪। আঠা
৫। সেলোটেপ বা প্লাস্টিক কভার (দীর্ঘস্থায়ীতার জন্য)
🛠️ তৈরির পদ্ধতি:
১। বড় একটি পিচবোর্ড নিন এবং তাতে ১১টি স্বরবর্ণ ও ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণের জন্য ঘর তৈরি করুন।
২। প্রতিটি ঘরে একটি অক্ষর লিখুন (যেমন: “অ”) এবং নিচে সম্পর্কিত ছবি (যেমন: “অজগর”) লাগান।
৩। ছবিগুলো কাটুন ও আঠা দিয়ে সঠিক অক্ষরের নিচে লাগান।
৪। চাইলে চার্টটি লেমিনেট বা সেলোটেপ দিয়ে মোড়ান, যেন সহজে ছিঁড়ে না যায়।
৫। চার্টটি দেয়ালে টানিয়ে দিন, যাতে প্রতিদিন শিশুদের চোখে পড়ে।
🎉 বিশেষ টিপস:
১। স্থানীয় জিনিসের ছবি ব্যবহার করুন, যেমন: “ক – কাঁঠাল”, “ট – টমেটো”।
২। শিক্ষার্থীদের দিয়ে ছবি আঁকিয়ে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ান।
৩। চার্টে রঙিন মারকার ব্যবহার করলে শিশুরা আরও আকৃষ্ট হবে।
৪. 🎲 মিল খেলা (Matching Game)
মিল খেলা একটি মজার ও শিক্ষামূলক খেলা, যেখানে শিশুরা একটি চিত্র বা শব্দের সাথে মিল খুঁজে বের করে। এটি মনে রাখার দক্ষতা ও চিন্তাশক্তি বাড়ায়।
✅ কী কাজে লাগে:
১। চিত্র ও শব্দের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে
২। স্মরণশক্তি ও মনোযোগ বাড়াতে
৩। বাংলা বর্ণ বা শব্দ শেখাতে
৪। শিক্ষাকে খেলাধুলার মাধ্যমে উপভোগ্য করতে
🧰 প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
১। পিচবোর্ড বা মোটা কাগজ
২। পুরনো ম্যাগাজিন থেকে কাটা ছবি
৩। রঙিন কাগজ, আঠা
৪। মারকার কলম
৫। কাঁচি ও স্কেল
🛠️ তৈরির পদ্ধতি:
১। পিচবোর্ড কেটে সমান আকারের অনেকগুলো ছোট কার্ড তৈরি করুন (যেমন: ২ ইঞ্চি × ২ ইঞ্চি)।
২। অর্ধেক কার্ডে বাংলা অক্ষর বা শব্দ লিখুন (যেমন: “ক”, “আম”, “১”)।
৩। বাকি অর্ধেকে সংশ্লিষ্ট ছবি লাগান (যেমন: “ক”-এর জন্য কাক, “আম”-এর জন্য আমের ছবি)।
৪। সব কার্ডগুলো উল্টো করে রেখে শিক্ষার্থীদের দিয়ে মিল খুঁজে বের করতে বলুন।
৫। প্রতিটি মিল হলে শিক্ষার্থীকে উৎসাহ দিন।
🎉 বিশেষ টিপস:
১। বিষয়ভিত্তিক আলাদা সেট বানান (বর্ণ, সংখ্যা, ফল, পশু-পাখি)।
২। শিশুদের দল করে খেলালে সামাজিক শিক্ষা ও সহযোগিতা তৈরি হয়।
৩। ভুল করলে হাসিমুখে সংশোধন করুন, যেন শিশু নিরুৎসাহিত না হয়।
৫. 📏 আকৃতি ও আকার বোর্ড (Shape & Size Board)
আকৃতি ও আকার বোর্ড হলো এমন একটি শিক্ষা উপকরণ যা শিশুরা বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি ও সাইজ চিনতে ও তুলনা করতে সাহায্য করে।
✅ কী কাজে লাগে:
১। বিভিন্ন আকৃতি যেমন বৃত্ত, বর্গ, ত্রিভুজ চিনতে
২। বড়, ছোট, লম্বা, চওড়া ইত্যাদি আকার বুঝতে
৩। হাত দিয়ে স্পর্শ করে শেখার মাধ্যমে জ্ঞানের গভীরতা বাড়াতে
৪। শিশুর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ বিকাশে সহায়তা করতে
🧰 প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
১। পিচবোর্ড বা শক্ত কাগজ
২। রঙিন কাগজ, ফোম পিস
৩। আঠা, স্কেল
৪। কাঁচি, মারকার কলম
৫। পুরনো ম্যাগাজিন থেকে কাটাকাটি
🛠️ তৈরির পদ্ধতি:
১। বড় একটি পিচবোর্ড নিন এবং বিভিন্ন আকৃতির জন্য জায়গা নির্ধারণ করুন।
২। রঙিন কাগজ থেকে বৃত্ত, বর্গ, ত্রিভুজ, আয়তক্ষেত্র ইত্যাদি আকৃতি কেটে নিন।
৩। বড়, ছোট আকারের মিল রেখে প্রতিটি আকৃতির বিভিন্ন সাইজ তৈরি করুন।
৪। আকৃতিগুলো বোর্ডে আঠা দিয়ে লাগান।
৫। প্রতিটি আকৃতির নাম বাংলায় লিখে বোর্ডে সংযুক্ত করুন।
🎉 বিশেষ টিপস:
১। শিশুদের দিয়ে নিজের হাতে আকৃতি আঁকাতে ও কাটাতে উৎসাহ দিন।
২। আকারের তুলনা করে খেলাধুলার মাধ্যমে শেখাতে পারেন।
৩। রঙিন
৬. 🧩 পাজল (Puzzle)
পাজল হলো টুকরো টুকরো ছবি বা আকৃতির খেলা, যা মিলিয়ে সম্পূর্ণ ছবি বা আকার গঠন করতে হয়। এটি শিশুর মনোযোগ, ধৈর্য এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়।
✅ কী কাজে লাগে:
১। সমস্যা সমাধান দক্ষতা বিকাশে
২। চিন্তাশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করতে
৩। বিভিন্ন আকৃতি ও রং চিনতে
৪। ধৈর্য ও স্থিরতার শিক্ষা দিতে
🧰 প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
১। মোটা কার্ডবোর্ড বা পিচবোর্ড
২। প্রিন্ট করা ছবি বা নিজস্ব অঙ্কিত ছবি
৩। কাঁচি
৪। আঠা
৫। রঙিন কলম বা পেন
🛠️ তৈরির পদ্ধতি:
১। একটি ছবি বা আকৃতি প্রিন্ট করুন বা হাতে অঙ্কন করুন।
২। মোটা কার্ডবোর্ডে ছবি আঠা দিয়ে শক্তভাবে লাগান।
৩। ছবি শুকিয়ে গেলে কাঁচি দিয়ে বিভিন্ন আকৃতিতে টুকরো করুন।
৪। টুকরোগুলো মিশিয়ে শিশুরা মিলিয়ে সম্পূর্ণ ছবি গঠন করবে।
৫। খেলতে খেলতে শেখার জন্য ছবি ও টুকরোর সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।
🎉 বিশেষ টিপস:
১। সহজ থেকে কঠিন স্তরে পাজল তৈরি করুন।
২। শিশুর বয়স অনুযায়ী টুকরোর সংখ্যা নির্ধারণ করুন।
৩। দলবদ্ধভাবে পাজল খেলার মাধ্যমে সহযোগিতা ও যোগাযোগ ক্ষমতা বাড়ান।
৭. ✂️ কাটা-ছাঁটা (Cut and Paste Activity)
কাটা-ছাঁটা কার্যক্রম শিশুদের সৃজনশীলতা, হাতের নৈপুণ্য এবং ধৈর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি শিক্ষা উপকরণ তৈরির জন্য একটি মজার ও কার্যকর পদ্ধতি।
✅ কী কাজে লাগে:
১। শব্দ, ছবি ও আকার মিলিয়ে শেখাতে
২। হাতে কলমে শেখার আগ্রহ বাড়াতে
৩। সৃজনশীলতা বিকাশে
৪। মনোযোগ ও ধৈর্য বৃদ্ধিতে
🧰 প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
১। পুরনো ম্যাগাজিন, রঙিন কাগজ
২। কাঁচি ও আঠা
৩। মোটা কাগজ বা কার্ডবোর্ড
৪। রঙিন কলম বা মারকার
৫। স্কেল (ঐচ্ছিক)
🛠️ তৈরির পদ্ধতি:
১। বিভিন্ন ছবি ও শব্দ কেটে নিন।
২। মোটা কাগজে বা কার্ডবোর্ডে আঠা দিয়ে সাজিয়ে লাগান।
৩। শিশুদের দিয়ে ছবি ও শব্দ মিলিয়ে সঠিক স্থানে বসাতে বলুন।
৪। বিভিন্ন আকার কেটে গঠন করাতে পারেন (যেমন: প্রাণী, ফল, গাছ ইত্যাদি)।
৫। কাজ শেষে তৈরি উপকরণ দিয়ে ছোটখাটো গল্প বা শিক্ষা দিতে পারেন।
🎉 বিশেষ টিপস:
১। শিশুদের নিজেদের পছন্দমতো ছবি কাটতে দিন।
২। দলবদ্ধভাবে কাজ করালে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ে।
৩। কাজের শেষে প্রশংসা ও উৎসাহ দিতে ভুলবেন না।
৮. 🎨 রঙের কার্ড (Color Cards)
রঙের কার্ড শিশুদের রং চেনার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সহজে তৈরি করা যায় এবং শিশুর রং চিন্তাভাবনা ও নাম শেখার জন্য কার্যকর।
✅ কী কাজে লাগে:
১। বিভিন্ন রং চেনাতে
২। রঙের নাম শেখাতে
৩। রঙের মাধ্যমে চিন্তার বিকাশে সাহায্য করতে
৪। রং দিয়ে খেলার মাধ্যমে শেখার আগ্রহ বাড়াতে
🧰 প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
১। রঙিন কাগজ বা পুরনো ম্যাগাজিন
২। মোটা কার্ডবোর্ড বা পিচবোর্ড
৩। কাঁচি ও আঠা
৪। মারকার কলম বা পেন
🛠️ তৈরির পদ্ধতি:
১। কার্ডবোর্ড বা পিচবোর্ড কেটে ছোট ছোট কার্ড বানান।
২। প্রতিটি কার্ডে একটি রঙিন কাগজ আঠা দিয়ে লাগান।
৩। রঙিন অংশের নিচে বা পাশে সংশ্লিষ্ট রঙের নাম বাংলায় লিখুন।
৪। কার্ডগুলো ভালো করে শুকিয়ে নিন।
৫। শিশুরা কার্ডগুলো দেখে রং চেনে এবং নাম বলে অনুশীলন করে।
🎉 বিশেষ টিপস:
১। রং মিলিয়ে খেলার আয়োজন করুন, যেমন—“লাল কার্ড দেখাও”।
২। রঙের নাম গানের মাধ্যমে শেখাতে পারেন।
৩। প্রাকৃতিক জিনিসের রঙ ও কার্ড মিলিয়ে শেখার সুযোগ দিন।
৯. 🐦 প্রাণী পরিচিতি কার্ড (Animal Identification Cards)
প্রাণী পরিচিতি কার্ড শিশুরা বিভিন্ন প্রাণী চিনতে এবং তাদের নাম শেখার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সহজে তৈরি করা যায় এবং শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
✅ কী কাজে লাগে:
১। প্রাণীর নাম ও চেহারা শেখাতে
২। বিভিন্ন প্রাণীর ধরণ ও বৈশিষ্ট্য বোঝাতে
৩। শব্দ উচ্চারণ অনুশীলনে সহায়তা করতে
৪। শিক্ষাকে মজাদার ও আনন্দময় করতে
🧰 প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
১। পিচবোর্ড বা মোটা কার্ডবোর্ড
২। পুরনো ম্যাগাজিন থেকে প্রাণীর ছবি
৩। রঙিন কাগজ ও আঠা
৪। মারকার কলম
৫। কাঁচি ও স্কেল
🛠️ তৈরির পদ্ধতি:
১। কার্ডবোর্ড থেকে সমান আকৃতির কার্ড কাটুন।
২। প্রতিটি কার্ডে একটি প্রাণীর ছবি লাগান।
৩। ছবির নিচে প্রাণীর নাম বাংলায় লিখুন (যেমন: “বাঘ”, “কুমির”)।
৪। কার্ডগুলো শুকিয়ে গেলে শিশুদের দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিন।
৫। শিশুদের প্রাণীর নাম উচ্চারণ ও বর্ণনা করানোর চেষ্টা করুন।
🎉 বিশেষ টিপস:
১। জীবজন্তুদের শ্রেণীবিভাগ (পশু, পাখি, মাছ ইত্যাদি) অনুযায়ী কার্ড বানাতে পারেন।
২। শব্দ উচ্চারণের জন্য গান বা কবিতা ব্যবহার করতে পারেন।
৩। শিশুদের প্রাণী কার্ড দিয়ে ছোটখাটো গল্প বলতে উৎসাহিত করুন।
১০. 📝 শব্দ তৈরি বোর্ড (Word Formation Board)
শব্দ তৈরি বোর্ড শিশুদের বাংলা বর্ণ বা অক্ষর থেকে শব্দ গঠন শেখানোর একটি কার্যকর শিক্ষা উপকরণ। এটি তাদের ভাষার দক্ষতা ও বানান দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।
✅ কী কাজে লাগে:
১। বর্ণ পরিচয় ও শব্দ গঠন শেখাতে
২। বানান ও উচ্চারণে উন্নতি করতে
৩। ভাষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করতে
৪। হাতে কলমে শেখার মাধ্যমে স্মৃতি শক্তি বাড়াতে
🧰 প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
১। পিচবোর্ড বা মোটা কার্ডবোর্ড
২। ছোট ছোট কার্ড বা চিপস (যেখানে অক্ষর লেখা থাকবে)
৩। রঙিন পেন বা মারকার
৪। আঠা ও কাঁচি
🛠️ তৈরির পদ্ধতি:
১। কার্ডবোর্ড থেকে ছোট ছোট কার্ড তৈরি করুন।
২। প্রতিটি কার্ডে একটি বাংলা বর্ণ বা স্বরবর্ণ লিখুন (যেমন: ক, খ, গ, আ, ই ইত্যাদি)।
৩। শিশুরা বিভিন্ন কার্ড দিয়ে সহজ থেকে জটিল শব্দ গঠন করবে।
৪। বানানে ভুল হলে সহনশীল ও উৎসাহব্যঞ্জকভাবে সংশোধন করুন।
৫। বিভিন্ন শব্দের ছবি লাগিয়ে বোর্ডে সাজিয়ে দিতে পারেন।
🎉 বিশেষ টিপস:
১। শব্দ গঠনের সময় খেলাধুলার উপাদান যোগ করুন (যেমন শব্দ বানানোর প্রতিযোগিতা)।
২। শিশুর বয়স অনুযায়ী শব্দের দৈর্ঘ্য বাড়ান।
৩। শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য নিয়মিত এই কার্যক্রম চালানো দরকার।
👩🏫 শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য পরামর্শ: কম খরচে শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে সহজ কৌশল
১. সময় বাঁচিয়ে কীভাবে বানানো যায়
১. আগেই প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো একত্রিত করুন।
২. সরল ও কম ধাপে তৈরির পদ্ধতি বেছে নিন।
৩. গ্রুপে কাজ ভাগ করে নিন, একসাথে তৈরি করলে সময় বাঁচে।
৪. পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহার করুন।
২. শিশুদের দিয়ে বানানোয় অংশগ্রহণ করানো
১. শিশুদের হাতে কলমে কাজ করান, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
২. শিশুদের ছোট ছোট কাজ দিন, যেমন রঙ করা, কাটাকাটি।
৩. শিশুদের কাজের প্রশংসা ও উৎসাহ দিন।
৪. শেখার আনন্দের পরিবেশ তৈরি করুন।
৩. ব্যবহারপদ্ধতি ও পরিচর্যার কৌশল
১. উপকরণগুলো পরিষ্কার ও শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করুন।
২. ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দ্রুত মেরামত করুন।
৩. শিক্ষার্থীদের উপকরণ যত্ন নিতে বলুন।
৪. উপকরণগুলো পুনরায় ব্যবহার করুন।
🧠 এই উপকরণগুলো ব্যবহার করে কীভাবে পাঠদান হবে
১. খেলার মাধ্যমে শেখা
১. শিক্ষার্থীদের উপকরণ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষামূলক খেলা করান।
২. প্রতিযোগিতামূলক খেলা শিশুদের শেখার আগ্রহ বাড়ায়।
৩. খেলার মাধ্যমে সহজেই জ্ঞান ও ধারণা আত্মস্থ হয়।
৪. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
২. দলগত কাজ
১. শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে উপকরণ দিয়ে কাজ করান।
২. দলগত কাজ থেকে সহযোগিতা ও যোগাযোগের দক্ষতা শেখা যায়।
৩. একে অপরের থেকে শেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৪. দলগত পরিবেশে শিশুদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
৩. প্রশ্নোত্তর ও রিভিশনের কাজে ব্যবহার
১. শিক্ষা উপকরণ দিয়ে পাঠ শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব চালিয়ে পাঠের পুনরাবৃত্তি করান।
২. রিভিশনে ফ্ল্যাশকার্ড, চার্ট ব্যবহার করলে দ্রুত ধারণা স্পষ্ট হয়।
৩. শিক্ষার্থীদের সক্রিয় করে রিভিউ সেশনটি আরও কার্যকর করুন।
৪. নিয়মিত প্রশ্নোত্তর শিশুদের স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
নিজের হাতে তৈরি শিক্ষা উপকরণ শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে প্রভাবশালী ও কার্যকর একটি শিক্ষণ মাধ্যম। এগুলো তৈরি করতে অতিরিক্ত অর্থ বা জটিল সামগ্রী প্রয়োজন হয় না, তাই কম খরচে সহজেই শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা যায়। এই ধরনের উপকরণ শিশুদের শেখার আগ্রহ বাড়ায় কারণ তারা হাতে কলমে, খেলা-ধুলার মাধ্যমে সহজে নতুন ধারণা গ্রহণ করতে পারে। শিক্ষকের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ইতিবাচক যোগাযোগ গড়ে ওঠে। অভিভাবকরাও সহজেই এসব উপকরণ তৈরিতে অংশ নিতে পারেন, যা শিক্ষার গুণগত মানে বড় পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। তাই শিক্ষক ও অভিভাবকরা যদি নিয়মিত এসব উপকরণ তৈরি ও ব্যবহার করেন, তবে শিক্ষার পরিবেশ অনেক বেশি উৎসাহব্যঞ্জক ও ফলপ্রসূ হবে।
আপনি কী ধরনের শিক্ষা উপকরণ তৈরি করেছেন? আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন কমেন্টে। যদি হয়, তাহলে আপনার তৈরি উপকরণের ছবি আমাদের দেখান। এছাড়া এই ব্লগটি অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে সবাই সহজ ও কম খরচে কার্যকর শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে উৎসাহিত হতে পারেন।
0 Comments